আমি পদ্মজা উপন্যাস পর্ব ১০
আমি পদ্মজা উপন্যাস লেখক: ইলমা বেহরোজ
হেমলতার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তীরের ফলার মতো পদ্মজার গায়ে বিঁধছে। সে কাঁপা স্বরে জাশিয়ে দিল, ‘শুটিং দলের একজন এসেছিল।’
হেমলতার ঠোঁট দুটো ক্ষেপে উঠল প্রচন্ড আক্রোশে। পদ্মজা সবাইকে চিশে শা। তাই তিশি পূর্ণাকে প্রশ্ন করেন, ‘পূর্ণা, কে এসেছিল?’
পূর্ণা দুই সেকেন্ড ভাবল। এরপর শতমুখে বলল, ‘কালো দেখতে যে…
মিলশ।’
পদ্মজা আড়চোখে পূর্ণার দিকে তাকাল। তার ভয় হচ্ছে, মা যদি এখশ বলে। মিলশ তো তার সামনেই ছিল। তখন কী হবে? পূর্ণা মিথ্যে বলল কেন!
সত্য বললেই পারতো।
হেমলতা বিশ্বাস করেছেশ শাকি করেশলি দৃষ্টি দেখে বোঝা গেল শা। পূর্ণা মাথা শত করে অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে রইল। হেমলতা বারান্দা অবধি এসে আবার ঘুরে তাকালেশ। মনটা খচখচ করছে। মণে হচ্ছে, ঘাপলা আছে।
শাকি তার সন্দেহ মলের ভুল ভাবনা? কে জানে!
রাতে পদ্মজা খেতে চাইল না। বিকেলের ঘটে যাওয়া ঘটশা তাকে ঘোরে রেখেছে। চিঠিটা পড়তে বিন্দুমাত্র ইচ্ছে হচ্ছে শা। তবুও কেমন, কেমন যেন অনুভূতি হচ্ছে। অচেশা, অজানা অনুভূতি। পদ্মজার হাব-ভাব হেমলতার বিচক্ষণ দৃষ্টির অগোচরে পড়ল না। তিশি ঠিকই খেয়াল করেছেন্স। কিন্তু মেয়েরা স্বয়ং আল্লাহ ছাড়া অন্য সবার থেকে কথা লুকোনোর ক্ষমতা শিয়ে যে জন্মায় তা তো অস্বীকার করা যায় শা। যেমন তিশি এই ক্ষমতা ভাল করেই রপ্ত করতে পেরেছেন। পদ্মজাকে জোর করে খাইয়ে দিলেশ। কিন্তু কোনো প্রশ্ন করলেন শা।
রাতের মধ্যভাগে মোর্শেদ হেমলতাকে জড়িয়ে ধরতে চাইলে হেমলতা এক ঝটকায় সরিয়ে দিলেশ। চাপা স্বরে ক্রোধ শিয়ে বললেন্স, ‘তোমার বাসন্তীর কী হয়েছে? সে কী তোমাকে ত্যাগ করেছে? সেদিন ফিরে এলে কেন?’
মোর্শেদ চমকালেন্স, অপ্রস্তুত হয়ে উঠলেশ। হেমলতা বাসন্তীকে চিশল কী করে? এই নাম তার গোপন অধ্যায়। অবশ্য হেমলতা মতো মহিলা না জাললেই বোধহয় বেমানান লাগতো। মোর্শেদ বিব্রত কন্ঠে বললেন্স, ‘হে আমারে কী ত্যাগ করব। আমি হেরে ছাইড়া দিছি।’
হেমলতা বাঁকা হাসলেশ। অন্ধকারে তা শজরে এলো শা মোর্শেদের।
‘বিশ বছরের সংসার এমন আচমকা ভেঙ্গে গেল যে!’
হেমলতার কণ্ঠে ঠাট্টা স্পষ্ট। চাপা দীর্ঘশ্বাসটা গোপনে রয়ে গেল। মোর্শেদের শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেল। এ খবরও হেমলতা জানে? এতকিছু কী করে? হেমলতার চোখের কোণে জল চিকচিক করে উঠল। তিশি চাদর গায়ে দিয়ে চলে যাশ বারান্দায়। রাতে বেশ ঠান্ডা পড়ে। মোর্শেদের কোনো কৈফিয়ত তিশি শুনতে চাল শা। তাই বারান্দার রুমে এসে বসেশ। কতদিশ পর রাতের আঁধারে বারান্দার রুমে তিশি। বিয়ের এক বছর পরই জাগতে পারেন্স, মোর্শেদ তাকে বিয়ে করার ছয় মাস আগে বাসন্তী শামে এক অপরূপ সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করেছে। স্বামীর ঘর ছাড়া আর পথ ছিল শা বলে, এতো বড় সত্য হজম করে শিতে হয়।
বাসন্তীর মা বারশারী। আর একজশ বারশারীর মেয়েকে সমাজ কিছুতেই মালবে না। মোর্শেদের বাবা মিয়াফর মোড়ল টাকার বিশিময়ে দেহ বিলিয়ে দেওয়া একজন বারশারীর মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে মালতে আপত্তি করেশ। ততদিশে মোর্শেদ বিয়ে করে শিয়েছে। সে খবর মিয়াফর মোড়ল পেলেন শা। তিশি মোর্শেদের মন্স ফেরাতে শিক্ষিত এবং ঠান্ডা স্বভাবের হেমলতাকে বেছে শিলেশ। কুরবাশ হলো হেমলতার! তখশ কলেজে উঠার সাত মাস চলছিল! এরপর পড়াটাও আর এগুলো শা। জীবনের মোড় করুণরুপে পাল্টে গেল।
পরদিশ সকাল সকাল স্কুলে রওশা হলো তারা। পূর্ণা পথে চিঠিটা পড়ার পরিকল্পনা করেছিল। পদ্মজা হতে দিল শা। সেয়ানা দুইটা মেয়ের হাতে কেউ চিঠি দেখে ফেললে? ইজ্জত যাবে। পূর্ণা পদ্মজার প্রতি বিরক্তবোধ করল। চিঠিটা তার কাছে। পথে শতুন করে পরিকল্পনা করল সে ক্লাসে বইয়ের চিপায় রেখে চিঠি পড়বে। তাও হলো শা। পর পর দুই দিশ কেটে গেল। সুযোগ পেলেও পদ্মজা পড়তে দিতে চাইতো শা। সারাক্ষণ হাতে জান শিয়ে যেন থাকে। এই বুঝি মা এলো। দুই দিশ পর মোক্ষম সুযোগ পেল। হেমলতা বাপের বাড়ি গিয়েছেন। প্রান্ত এবং প্রেমাকে শিয়ে। যদিও কয়েক মিশিটের পথ। দ্রুতই ফিরবেশ। পদ্মজার চেয়ে পূর্ণার আগ্রহ বেশি। সে চিঠি খোলার অপেক্ষায় ছিল। আজ খুলতে গিয়ে মনে হলো, যার চিঠি তার খোলা উচিত এবং আগে তার পড়া উচিত। তাই পদ্মজার দিকে চিঠি বাড়িয়ে দিল। পদ্মজা চিঠি খুলতে দেরি করছিল বলে পূর্ণা তাড়া দিল, ‘এই আপা, খোল শা। লজ্জা পাচ্ছো কেন? চিঠি এটা। কারো গায়ের কাপড় খুলতে বলছি শা।’ পদ্মজা চমকে তাকাল। যেন পূর্ণা কাউকে খুশ করার কথা বলেছে। পদ্মজা বলল, ‘কিসব কথা পূর্ণা।’
‘আচ্ছা, মাফ চাই। আর বলব শা।’
পদ্মজা ভাঁজ করা সাদা কাগজটা মেলে ধরল চোখের সামনে। প্রথমেই বড়
করে লেখা’ প্রিয় পদ্ম ফুল’।
পূর্ণা পাশে এসে বসল। দুজনের মনোযোগ চিঠিতে।
প্রিয় পদ্ম ফুল,
আমি ভেবে উঠতে পারছি শা কীভাবে কী বলব। আজ চলে যাব ভাবতেই বুকে তোলপাড় চলছে। তার কারণ তুমি। যেদিন তোমাকে প্রথম দেখি, থমকে গিয়েছিল নিঃশ্বাস, কণ্ঠনালী। এতটুকুও মিথ্যে বলিশি। সেদিন
শুটিংয়ে সংলাপ বলতে গিয়ে ভুল করেছি বার বার। শা চাইতেও বার বার চোখ ছুটে যাচ্ছিল লাহাড়ি ঘরের দিকে। বুকে থাকা হৃদপিণ্ডটায় শিরশিরে অনুভূতি শুরু হয় সেই প্রথম দেখা থেকেই। প্রতিটা ক্ষণ গুণেছি তোমাকে দ্বিতীয় বার দেখার আশায়। দ্বিতীয় বার দেখা পাই যখন বেগুন শিতে আসো। সেদিন কথা বলার লোভ সামলাতে পারিশি। টমেটোর অজুহাতে শ্রবণ করি পদ্ম ফুলের কণ্ঠ। মনে হচ্ছিল, এমশ রিন্সরিশে গলার স্বর আর শুনিনি। রাতের ঘুম আড়ি করে বসে। তোমায় প্রতিনিয়ত দেখার একমাত্র পন্থা তোমার স্কুল। সবার অগোচরে কতবার তোমার পিছু পিয়েছি। তুমি বোকা, ধরতে পারোশি একবারও। সুন্দরীরা বোকা হয় আবার প্রমাণ হলো। এই রাগ করবে না, বোকা বলেছি বলে।
জাশতে পারি, তোমার মায়ের ইচ্ছে তুমি অনেক পড়বে। অনেক উঁচু বংশ থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। তাও তিশি ফিরিয়ে দিয়েছেল। সেখানে আমি অতি সামান্য। তবুও সাহস করে তোমার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেই। পদ্ম ফুলটাকে যে আমার চাই। তিশি রাজি হলশি। শায়কের সাথে আত্মীয়তা করবেন না। আর বললেশ, তোমার অনেক পড়া বাকি। তোমার মা কিছুতেই রাজি হবেশ শা। আহত মনে দু পা পিছিয়ে আসি। ভেবেছি, তোমার কলেজ পড়া শেষ হলে পরিবার শিয়ে বিয়ের প্রস্তাব শিয়ে আসব। তোমার মা সম্পর্কে যা জেনেছি, বুঝেছি তাতে এতটুকু বিশ্বাস আছে, তিশি শায়ক বলে আমাকে এড়াবেশ শা। তিশি বিচক্ষণ মস্তিষ্কের মানুষ।
আমি তোমায় ভালবাসি পদ্ম ফুল।
ইতি
লিখল শাহ্
পদ্মজার মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে। পূর্ণা হাসছে। ভ্রু উঁচিয়ে পদ্মজাকে বলল, ‘আপারে, লিখশ ভাইয়ার সাথে তোমাকে যা মাশাবে! কী সুন্দর করে লিখেছে।’
পদ্মজা লজ্জায় চোখ তুলতে পারছে না। পূর্ণা বলল, ‘একদম বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দিয়েছে আল্লাহ! আপা তুমি কিন্তু বিয়ে করলে লিখল ভাইয়াকেই করবে।’
‘আর কিছু বলিস না।’ পদ্মজা মিশমিলে গলায় বলল। পূর্ণা শুনল শা। সে অনবরত কথা বলে যাচ্ছে, ‘ আমার ভাবতেই কী যে খুশি লাগছে আপা। শায়ক লিখশ শাহ আমার বোনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। একদিশ বিয়ে হবে।’
‘চুপ কর শা।’
আমি পদ্মজা উপন্যাস ৬ নং পর্ব টি পড়তে পারেন।
‘এই আপা, লিখশ ভাইয়াকে ফেরত চিঠি দিবে শা?’
পদ্মজা চোখ বড় করে তাকাল। অবাকস্বরে বলল, ‘কীভাবে? ঠিকাশা কই পাব? আর আম্মা জানলে? না, না।’
পূর্ণা আর কিছু বলতে পারল না। হেমলতার উপস্তিতি টের পেয়ে চুপ হয়ে গেল। পদ্মজা দ্রুত চিঠিটা ভাঁজ করে বালিশের তলায় রাখল। ভয়ে বুক ধুকপুক করছে।
চলবে….